পিনাকী রঞ্জন পাল : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, যেখানে প্রতিটি বল ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে, সেখানে ৩৪৯ রানের বিশাল দলগত স্কোর অর্জন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির এবারের আসরে বরোদা যা করে দেখিয়েছে, তা শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসেও একটি নতুন মাইলফলক। ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর, সিকিমের বিপক্ষে বরোদার এই ইনিংস ক্রিকেটবিশ্বকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের এই অর্জন শুধু স্কোরবোর্ডেই নয়, বরং ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতা রাঙিয়ে দিল।
সিকিমের বিপক্ষে ম্যাচে বরোদার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ যেন তাণ্ডব চালিয়েছে। ভানু পানিয়া, বিষ্ণু সোলাঙ্কি, অভিমন্যু সিং রাজপুত এবং শিবালিক শর্মা—সবাই মিলে এমন একটি দলীয় ইনিংস গড়েছেন, যা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
ভানু পানিয়া এই ম্যাচে দলের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। ৫১ বলে ১৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি দেখিয়েছেন কেন তাকে বরোদার “ব্যাটিং পাওয়ারহাউস” বলা হয়। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার এবং ১৫টি ছক্কা। মাত্র ৪২ বলে শতরান পূর্ণ করে তিনি রেকর্ড বইয়ের একটি আলাদা অধ্যায় তৈরি করেছেন।
অভিমন্যু সিং রাজপুত (১৪ বলে ৫০), শিবালিক শর্মা (১৬ বলে ৫৫), বিষ্ণু সোলাঙ্কি (১৫ বলে ৫০)—এই তিন ব্যাটার বরোদার ইনিংসে একের পর এক বিধ্বংসী শট মেরে সিকিমের বোলিং আক্রমণকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেন। তাদের এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণেই বরোদা মাত্র ২০ ওভারে ৩৪৯ রানের বিশাল স্কোর করতে সক্ষম হয়।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এর আগে দলগত সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড ছিল জিম্বাবোয়ের, যারা গাম্বিয়ার বিপক্ষে ৩৪৪ রান করেছিল। তবে বরোদার এই ৩৪৯ রান সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ স্কোরের তালিকা :
- বরোদা: ৩৪৯/৫ বনাম সিকিম (২০২৪)
- জিম্বাবোয়ে: ৩৪৪/৪ বনাম গাম্বিয়া (২০২৪)
- নেপাল: ৩১৪/৩ বনাম মঙ্গোলিয়া (২০২৩)
- ভারত: ২৯৭/৬ বনাম বাংলাদেশ (২০২৪)
- সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২৮৭/৩ বনাম আরসিবি (২০২৪)
বরোদার এই ইনিংস শুধু বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্যই নয়, বরং বোলিংয়েও সিকিমকে সম্পূর্ণভাবে হার মানিয়েছে। ৩৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সিকিম ২০ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ৮৬ রান করতে পারে। বরোদার অধিনায়ক ক্রুণাল পান্ডিয়া নিজে ব্যাট হাতে না নামলেও, বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়ে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন।
বরোদার ব্যাটারদের আক্রমণাত্মক মানসিকতা এবং শটের বৈচিত্র্য সিকিমের বোলারদের বিপক্ষে কার্যকর প্রমাণিত হয়।
পাওয়ারপ্লে থেকে ডেথ ওভার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে রান তোলার গতি বজায় রাখা ছিল বরোদার ব্যাটিং পরিকল্পনার মূল চাবিকাঠি।
বরোদার ফিল্ডিং এবং বোলিং ইউনিট সিকিমের ব্যাটারদের কখনোই চাপমুক্ত হতে দেয়নি।
বরোদার এই জয় শুধু তাদের আত্মবিশ্বাসকেই বাড়াবে না, বরং প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য একটি কড়া বার্তাও পাঠাবে। হার্দিক পান্ডিয়া ও ক্রুণাল পান্ডিয়ার অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, ভানু পানিয়ার বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং অন্যান্য ব্যাটারদের সমর্থন বরোদাকে এই টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে গড়ে তুলেছে।
বরোদার এই রেকর্ড টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতার গভীরতাকে তুলে ধরেছে।
এটি স্থানীয় ক্রিকেটারদের প্রতিভা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাদের সম্ভাবনার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
বরোদার এই ইনিংস কেবল একটি ম্যাচ জয়ের গল্প নয়, বরং ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তি এবং গভীরতার প্রতিফলন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ধরনের বিশ্বরেকর্ড শুধু খেলোয়াড়দের নয়, ভারতীয় ক্রিকেট ব্যবস্থারও সাফল্য। সিকিমের বিপক্ষে এই ম্যাচ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস বরোদাকে টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই বিশ্বরেকর্ডের মধ্য দিয়ে বরোদা ঘরোয়া ক্রিকেটের মানচিত্রে নিজেকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করল। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় থাকবে বরোদার পরবর্তী ম্যাচের জন্য, যেখানে তারা আরও একটি বিস্ময় উপহার দিতে পারে।