পিনাকী রঞ্জন পাল : ক্রীড়া জগতে কিছু ঘটনা ঘটে যা সত্যিই কল্পনাকে হার মানায়। ২২ বছর বয়সী কিউই ব্যাটার বেভন জ্যাকবসের আইপিএল যাত্রা তেমনই একটি গল্প। ঘরোয়া ক্রিকেটে সামান্য অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেকের কোনো সম্ভাবনা ছাড়াই মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তাকে ৩০ লাখ টাকায় দলে নিয়েছে। এটি শুধুমাত্র তার জন্য নয়, পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার জন্য একটি বিস্ময়কর ঘটনা।
বেভন জ্যাকবস দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবেই নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে তার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তবে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে তার শুরুটা ছিল অপেক্ষাকৃত দেরিতে, ২০২৩ সালে। এ পর্যন্ত ৯টি ম্যাচে ১৩৪ রান করা এই ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ১৮৮.৭৩ হলেও, গড় মাত্র ৩৩.৫০। তার সেরা ইনিংস ৪২ রানের।
তারপরেও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মতো দল তাকে কেন বেছে নিল? এটি প্রশ্ন উঠতেই পারে। এর উত্তরে জ্যাকবসের অনন্য স্ট্রাইক রেট এবং দ্রুত রান তোলার ক্ষমতাই মূল কারণ বলে ধরা যায়। বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে দ্রুত রান তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন একজন ব্যাটারকে নেওয়া ভবিষ্যতের কথা ভেবে করা বিনিয়োগ হিসেবেই দেখা যেতে পারে।
আইপিএল দীর্ঘদিন ধরে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতিভা বিকাশের মঞ্চ হিসেবে পরিচিত। বেভন জ্যাকবসের মতো খেলোয়াড়ের জন্য এটি আদর্শ সুযোগ। তার স্ট্রাইক রেট এবং ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংস দেখিয়ে দেয় যে তার মধ্যে রয়েছে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের ক্ষমতা। যদিও তার গড় আহামরি নয়, আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় এমন ব্যাটারদের জন্য সুযোগ দেওয়া নতুন নয়।
জ্যাকবস নিজেও বলেছেন যে তিনি নিলামের দিনে ঘুমিয়ে ছিলেন এবং দল পাওয়া নিয়ে কোনো প্রত্যাশা ছিল না। তার এই সরলতা এবং বিনয়ই তাকে বিশেষ করে তুলেছে।
বেভন জ্যাকবসকে দলে নেওয়ার পর ক্রিকেটবিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ একে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের দুর্দান্ত স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, যেখানে তরুণ প্রতিভাকে সুযোগ দিয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নেওয়া সম্ভব। আবার কেউ মনে করছেন, এত সীমিত অভিজ্ঞতার একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া মুম্বাইয়ের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তবে আইপিএলে এমন নজির নতুন নয়। প্রতিবারই কিছু অখ্যাত খেলোয়াড় নিজেদের চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নেন। উদাহরণস্বরূপ, জস বাটলার, ডেভিড মিলার, কিংবা হার্দিক পান্ডিয়ার মতো খেলোয়াড়ও একসময় আইপিএলের মঞ্চে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছিলেন।
বেভন জ্যাকবসের সামনে এখন রয়েছে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ। তার দক্ষতা, মনোভাব এবং পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা দেখানোর জন্য আইপিএল হতে পারে একটি আদর্শ মঞ্চ। বিশেষ করে, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মতো প্রতিষ্ঠিত দলে তার খেলার সুযোগ পাওয়া মানেই শিখতে পারার এক বিশাল সুযোগ।
যদিও তার সীমিত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, তবে আইপিএল ইতিহাস দেখিয়েছে যে, ক্রিকেট শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের খেলা নয়। এটি সুযোগ এবং আত্মবিশ্বাসের মঞ্চ। বেভন জ্যাকবস যদি এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন, তবে তার আইপিএল যাত্রা শুধু তার নিজের জন্য নয়, অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বেভন জ্যাকবসের আইপিএলে দল পাওয়ার ঘটনাটি তার মতো তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা দেয়। নিজের দক্ষতার প্রতি বিশ্বাস রাখুন, কারণ আপনি কখন সুযোগ পাবেন তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। জ্যাকবসের এই যাত্রা কেবল শুরু। এখন দেখার বিষয়, তিনি তার প্রতিভার আলো দেখিয়ে কিভাবে আইপিএলে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেন।