Cricket : ভারতীয় ক্রিকেটে টাকার ছড়াছড়ি: এক নতুন যুগের সূচনা?

হঠাৎ করেই যেন ভারতীয় ক্রিকেটে এক ঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের আবির্ভাব ঘটেছে। জাতীয় দল থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট—সব স্তরেই উদীয়মান খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। এই সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ? টাকা। বিপুল অর্থের প্রলোভনই এখন ভারতীয় ক্রিকেটে হ্যামলিনের বাঁশি।

ক্রিকেটার হওয়া মানেই এখন শুধু খ্যাতি নয়, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার হাতছানিও। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটের দরজা পেরোতেই হাতের নাগালে আসছে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। বহু সমালোচনার মাঝেও আইপিএল-এর মতো টুর্নামেন্ট ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) আয়ের ঝর্ণাধারায় রূপ নিয়েছে। এর ফলে শুধু বোর্ডের তহবিলই নয়, প্রদেশের ক্রিকেট সংস্থাগুলিও লাভবান হয়েছে। বোর্ডের এই টাকাই এখন ভারতের ক্রিকেট পরিকাঠামোর মূল ভিত্তি, যা দেশজুড়ে নতুন প্রতিভা খুঁজে আনতে সাহায্য করছে।

সৌরভ গাঙ্গুলির সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়েছে এই আর্থিক প্রভাব। পাকিস্তানের এক টিভি চ্যানেলকে তিনি জানিয়েছিলেন, “আজকের দিনে ক্রিকেটে প্রচুর ছেলে আসছে কারণ তারা জানে, ভালো খেললে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে। বোর্ডের হাতে বিপুল অর্থ আসার ফলে এখন সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করে ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।” এই আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তাই ভারতীয় ক্রিকেটের রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়িয়েছে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে আয়ের সম্ভাবনা

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পেলেই একজন ক্রিকেটার নিশ্চিত করতে পারেন আর্থিক সাফল্য। বিসিসিআই-এর বেতন কাঠামো অনুযায়ী,

  1. প্রথম অভিজ্ঞতা: যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথমবার অংশ নেন, তাদের দৈনিক ₹৪০,০০০ দেওয়া হয়।
  2. ২০ ম্যাচ অভিজ্ঞতা: ২০টির বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের বেতন বাড়িয়ে দৈনিক ₹৫০,০০০ করা হয়।
  3. ৪০ ম্যাচ অভিজ্ঞতা: অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, যারা ৪০টির বেশি ম্যাচ খেলেছেন, তারা পান দৈনিক ₹৬০,০০০।

এই বেতন কাঠামো এক বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য ₹২০ লক্ষ থেকে ₹৩০ লক্ষ পর্যন্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করে।

ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এবং আয়

ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডার বেশ ব্যস্ত। একজন রাজ্য দলের ক্রিকেটার বছরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন। যেমন:

  1. রঞ্জি ট্রফি
    এটি দেশের প্রধান চার দিনের টুর্নামেন্ট। একজন ক্রিকেটার সাধারণত ৮ থেকে ১০টি ম্যাচ খেলেন। প্রতিটি ম্যাচ চার দিন ধরে চলায় ৩২-৪০ দিন খেলার সুযোগ থাকে।
  2. বিজয় হাজারে ট্রফি
    একদিনের ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে ৯-১০টি ম্যাচ খেলতে হয়।
  3. সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি
    টি-২০ ফরম্যাটে ১০-১২টি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকে।

সব মিলিয়ে একজন ক্রিকেটার বছরে গড়ে ৫০ দিন খেললে, তার আয় ন্যূনতম ₹২০ লক্ষ থেকে ₹৩০ লক্ষ হতে পারে।

অতিরিক্ত সুবিধা
কেবল বেতন নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটাররা পান আরও নানা সুবিধা:
টুর্নামেন্ট চলাকালীন বিমান ভ্রমণ এবং পাঁচ তারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা।
চিকিৎসা খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে।
এই আর্থিক নিশ্চয়তা অনেক প্রতিভাকে বড় স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে। যে খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে পৌঁছতে পারেন না, তারাও রাজ্য স্তরে খেলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিভার জোয়ার

আইপিএল-এর সাফল্য যেমন বিসিসিআই-এর তহবিল বৃদ্ধি করেছে, তেমনি এর প্রভাব পড়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটেও। চোখ ধাঁধানো আর্থিক প্রণোদনার ফলে এখন বাইশ গজে প্রতিভার ঢেউ উঠেছে। প্রতিভার এই জোয়ার শুধুমাত্র জাতীয় দলে প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে না, বরং ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে আরও শক্তিশালী করছে।

আজকের দিনে আর্থিক নিশ্চয়তা এবং সুযোগের হাতছানিই ভারতীয় ক্রিকেটের মহাসড়কে নতুন রক্তের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। যেসব প্রতিভা একসময় আলোর অভাবে হারিয়ে যেত, তারা এখন ক্রিকেটের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠছে। বোর্ডের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং এর সদ্ব্যবহারই ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান উত্থানের আসল রহস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *