পিনাকী রঞ্জন পাল : বাংলার মহিলা ক্রিকেট দল সোমবার এক ঐতিহাসিক ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ক্রিকেট জগতে আলোড়ন তুলেছে। রাজকোটে অনুষ্ঠিত সিনিয়র ওমেন্স ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে, বাংলার সামনে ৫০ ওভারে ৩৯০ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল হরিয়ানা। এমন লক্ষ্য দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ম্যাচের ফলাফল। কিন্তু বাংলার লড়াকু মেয়েরা সকল প্রত্যাশা পেরিয়ে গড়ে তুলল এক অবিস্মরণীয় জয়, যা মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
হরিয়ানা প্রথমে ব্যাট করে ৩৮৯/৫ রানের পাহাড় গড়ে তোলে। জাতীয় দলের তারকা শেফালি বর্মা ছিলেন হরিয়ানার ব্যাটিং পারফরম্যান্সের প্রধান ভিত্তি। তিনি মাত্র ১১৫ বলে ২২টি চার ও ১১টি ছয়ের সাহায্যে ১৯৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। তাঁর ইনিংসটি প্রতিপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এছাড়া রিমা সিসোদিয়া ৫৮ এবং সোনিয়া মেহন্দিয়া ৬১ রান করেন।
বাংলার মেয়েদের সামনে এই লক্ষ্য ছিল পাহাড়সম। কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি। ব্যাট হাতে একের পর এক চমক দেখিয়ে বাংলার মেয়েরা পাঁচ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায়।
বাংলার ইনিংস শুরু করেন ধারা গুজ্জর এবং ষষ্ঠী মণ্ডল। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৯.১ ওভারে ১০০ রান তোলে এই জুটি। গুজ্জর ৪৯ বলে ৬৯ রান করেন এবং ষষ্ঠী মণ্ডল ২৯ বলে ৫২ রান করেন। তাঁদের এই ঝোড়ো সূচনা বাংলাকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দেয়।
৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তনুশ্রী সরকার। ৮৩ বলে ঝকঝকে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ২০টি চারের মার। পরে প্রিয়াঙ্কা বালা অপরাজিত ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন এবং দলকে জয় এনে দেন। বালার ইনিংসে ছিল ৮১ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
৩৮৯ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে বাংলা দল ভেঙে দিল নিউজিল্যান্ডের নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট ইউমেন্স টিমের রেকর্ড। এর আগে ২০১৯ সালে ক্যান্টারবেরির বিরুদ্ধে ৩০৯ রান তাড়া করে জিতেছিল নিউজিল্যান্ডের দলটি। বাংলার মেয়েরা সেই রেকর্ড পেরিয়ে ৩৯০ রান তাড়া করে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন নজির গড়ে তুলল।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন তনুশ্রী সরকার। ব্যাট হাতে ১১৩ রান করার পাশাপাশি বল হাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। হরিয়ানার ব্যাটিংয়ের সময় তনুশ্রী ৫৬ রানে ৩টি উইকেট তুলে নেন। তাঁর এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলার জয় নিশ্চিত করেছে।
ম্যাচ শেষে বাংলার কোচ বলেন, “মেয়েদের বলেছিলাম যে পিচ ব্যাটিং সহায়ক। তাই বড় রান তোলার সম্ভাবনা ছিল। মেয়েরা আজ অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। আমি তাঁদের নিয়ে গর্বিত।”
তনুশ্রী সরকার বলেন, “এমন ম্যাচ জেতার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমরা শুধু আমাদের সেরা খেলাটা খেলেছি। আজকের দিনটা বাংলার ক্রিকেটের জন্য গর্বের।”
বাংলার মহিলা ক্রিকেট দলের এই জয় শুধু রেকর্ড নয়, এটি মহিলা ক্রিকেটে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এই দল দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছা ও পরিশ্রম থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। বাংলার মেয়েদের এই জয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।