পিনাকী রঞ্জন পাল : শেষ হয়েছে আইপিএল ২০২৫-এর মহা নিলাম। এই নিলামে যেমন নতুন তারকারা জায়গা পেয়েছেন, তেমনি অনেক পরিচিত মুখ দল পাননি। নিলামের মঞ্চে রেকর্ড পরিমাণ অর্থে বিক্রি হয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার, আবার অনেক মহাতারকাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এই অবিক্রিত তারকাদের তালিকায় রয়েছেন এমন কিছু নাম, যাঁরা একসময় আইপিএলে নিজেদের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন। তবে কেন এই ক্রিকেটাররা নিলামে দল পেলেন না? কীভাবে তাঁদের অতীতের সাফল্য আজকের ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল? এই প্রশ্নগুলিই উঠে এসেছে আলোচনায়।
ডেভিড ওয়ার্নার : একসময় আইপিএলের রাজা, আজ অপ্রাসঙ্গিক
অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার, যাঁর নেতৃত্বে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০১৬ সালে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, এবারের নিলামে দল পাননি। আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম সফল ওপেনার ওয়ার্নার নিজের ন্যূনতম মূল্য ২ কোটি টাকা ধার্য করেছিলেন। কিন্তু বয়স ও ফিটনেসের কারণে তাঁকে কিনতে আগ্রহী হয়নি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি। অতীতে দিল্লি ক্যাপিটালসের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়ার্নার, যাঁর রান তোলার দক্ষতা একসময় বিপক্ষের আতঙ্ক ছিল, আজ নিলামে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন।
জেমস অ্যান্ডারসন : টেস্ট কিংবদন্তির টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতা
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন পেসার জেমস অ্যান্ডারসন, যাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৭০৪টি টেস্ট উইকেট, প্রথমবার আইপিএলে নাম দিয়েও দল পাননি। অবসরের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিজ্ঞতা না থাকায় অ্যান্ডারসনের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনও দল। তাঁর বয়স এবং ফর্মাটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অক্ষমতাই সম্ভবত তাঁকে অবিক্রিত রাখল।
কেন উইলিয়ামসন : চোট এবং ফর্মের কারণে উপেক্ষিত
নিউজিল্যান্ডের তারকা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন, যিনি একসময় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক ছিলেন, তাঁর দল না পাওয়ার পেছনে রয়েছে চোট এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের অভাব। উইলিয়ামসন এখনও সম্পূর্ণ চোটমুক্ত নন, এবং তাঁর স্ট্রাইক রেটেও পতন ঘটেছে। ফলে আইপিএলের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি।
স্টিভ স্মিথ : নেতৃত্বগুণেও বদল হল না ভাগ্য
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, যিনি একসময় রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের অধিনায়ক ছিলেন, গত কয়েক বছর আইপিএল থেকে দূরে ছিলেন। এবার নিলামে নিজের ন্যূনতম মূল্য ২ কোটি টাকা ধার্য করলেও, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনও দল।
পীযূষ চাওলা : অভিজ্ঞতা না পেরোলো বয়সের বাধা
ভারতের অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার পীযূষ চাওলা, যাঁর ঝুলিতে ১৯২টি আইপিএল উইকেট রয়েছে, এবার নিলামে দল পাননি। ৩৫ বছর বয়সি এই স্পিনার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখালেও, বয়স ও সীমিত কার্যকারিতার কারণে তাঁকে আর বিবেচনায় আনেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি।
জনি বেয়ারস্টো : ফর্মে ফেরার অপেক্ষায় ব্রিটিশ তারকা
ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার-ব্যাটার জনি বেয়ারস্টো, যিনি পাঞ্জাব কিংস এবং হায়দরাবাদের হয়ে সফল আইপিএল কেরিয়ার গড়েছেন, এবার নিলামে অবিক্রিত থেকে গেলেন। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব এবং গত মরশুমে চোটের কারণে তিনি দল পাননি।
সিকন্দর রাজা : অলরাউন্ডারের অপূর্ণ সম্ভাবনা
জ়িম্বাবোয়ের সাদা বলের অধিনায়ক সিকন্দর রাজা, যিনি আইপিএলে অল্প সুযোগ পেলেও নজর কেড়েছিলেন, এবার দল পাননি। তাঁর অলরাউন্ড দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি তাঁকে কিনতে আগ্রহ দেখায়নি।
ডেওয়াল্ড ব্রেভিস : তরুণ প্রতিভার অকাল ছন্দপতন
দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ প্রতিভা ডেওয়াল্ড ব্রেভিস, যাঁকে ‘বেবি এবি’ বলা হয়, নিলামে দল পাননি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ভালো পারফর্ম করলেও, ধারাবাহিকতার অভাবে এবার তাঁকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরও অবিক্রিত তারকা
শুধু এই নামগুলোই নয়, অবিক্রিত থেকে গিয়েছেন আরও অনেক প্রথম সারির ক্রিকেটার। শাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, উমেশ যাদব, শার্দূল ঠাকুর, সরফরাজ খান—এই তালিকা লম্বা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স, ফর্মের অভাব, চোট এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির নির্দিষ্ট চাহিদা তাঁদের দল না পাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দল না পাওয়ার কারণ : বিশ্লেষণ
১. বয়স এবং ফিটনেস : অনেক অভিজ্ঞ তারকার দল না পাওয়ার মূল কারণ তাঁদের বয়স এবং ফিটনেস।
২. সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স : সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের অভাব এবং ফর্মহীনতা অনেক তারকাকে অবিক্রিত রেখেছে।
৩. চোট : চোটের সমস্যা যেমন উইলিয়ামসনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪. নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি চাহিদা : আইপিএল দলগুলি তরুণ এবং ফিট ক্রিকেটারদের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
আইপিএল ২০২৫-এর নিলাম দেখিয়ে দিল, খ্যাতি বা অতীত সাফল্যই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মন জয় করতে যথেষ্ট নয়। এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে দরকার ধারাবাহিক ফর্ম, ফিটনেস, এবং বর্তমানের পারফরম্যান্স। এবারের নিলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, ক্রিকেটে শুধুমাত্র অতীতের কৃতিত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায় না।