বিশাখাপত্তনমে দিল্লি ক্যাপিটালসের অবিশ্বাস্য জয়! ৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও আশুতোষ শর্মার দুর্দান্ত ইনিংসে বদলে গেল ম্যাচের মোড়। শেষ ওভারে নাটকীয় ছক্কায় দলকে জেতালেন তিনি- জন্ম নিল নতুন ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’! কে এই আশুতোষ শর্মা? কোথা থেকে এলেন তিনি? লিখেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল।
ক্রিকেট দুনিয়ায় কখনও কখনও এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা একজন খেলোয়াড়ের জীবন বদলে দিতে পারে। বিশাখাপত্তনমে দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচটিও ছিল তেমনই। যেখানে এক তরুণ ক্রিকেটার নিজের ব্যাটের ঝলকে রাতারাতি পরিচিত হয়ে গেলেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। তাঁর নাম আশুতোষ শর্মা। মাত্র ৩১ বলে ৬৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে প্রমাণ করলেন, তিনিই দিল্লির নতুন ‘ফিনিশার’।
দিল্লি যখন মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে, তখন খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিলেন, এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। বড় লক্ষ্য, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, এবং ধুঁকতে থাকা ব্যাটিং লাইনআপ—সবকিছুই দিল্লির বিপক্ষে ছিল। তবে তখনই ক্রিজে আসেন আশুতোষ শর্মা। একজন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে তাঁর ব্যাটে ছিল ভয়ডরহীনতা, ছিল জয়ের প্রতি অদম্য জেদ।
প্রথমদিকে ধীরস্থিরভাবে ইনিংস গড়লেও, সময় গড়ানোর সাথে সাথে তাণ্ডব শুরু করেন এই ব্যাটার। বিশেষ করে ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে দুই ছক্কা ও একটি চার, যা পুরো ম্যাচের গতিপথই বদলে দেয়। শেষ দুই ওভারে যখন ২২ রান দরকার, তখনো লড়াইটা ছিল কঠিন। কিন্তু আশুতোষ একাই সেই লড়াই জিতলেন।
শেষ ওভারে দিল্লির দরকার ছিল ৬ রান, হাতে মাত্র ১ উইকেট। প্রথম বলেই রান নিতে ব্যর্থ হন মোহিত শর্মা, কিন্তু ভাগ্য তাঁর সাথে ছিল, কারণ উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত সহজ স্টাম্পিং মিস করেন। পরের বলে মোহিত সিঙ্গেল নেওয়ায় স্ট্রাইকে ফেরেন আশুতোষ। তখন দরকার ৫ রান।
সবার হৃদস্পন্দন যখন থমকে আছে, তখনই শাহবাজ আহমেদকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে দিল্লির জয় নিশ্চিত করেন আশুতোষ! এমন দুর্দান্ত ম্যাচ ফিনিশিং খুব কম দেখা যায়। মাত্র তিন বল বাকি থাকতেই দলকে একেবারে অসম্ভব পরিস্থিতি থেকে টেনে নিয়ে এলেন এই তরুণ ব্যাটার।
কিন্তু কে এই আশুতোষ শর্মা? কোথা থেকে এলেন তিনি? ১৯৯৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের রতলামে জন্ম আশুতোষ শর্মার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল তাঁর। তবে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও সুযোগের অভাব তাঁকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। তিনি ভূপেন চৌহানের কাছে ক্রিকেটের হাতেখড়ি নেন, পরে গুরুতর প্রশিক্ষণ পান চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের অধীনে।
২০২৩ সালে রেলওয়েজের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি, কিন্তু আসল পরিবর্তন আসে ২০২৪ সালে, যখন আইপিএল তাঁকে নতুন এক পরিচয় দেয়। মাত্র ২০ লাখ টাকায় পাঞ্জাব কিংস তাঁকে দলে নেয়, কিন্তু সেখানেও তিনি বেশি সুযোগ পাননি। তবে ভাগ্য তাঁর জন্য অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিল। দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁকে নিলামে তুলে নেয়, এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর স্বপ্নপূরণের যাত্রা।
এই ইনিংসের পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশুতোষ শর্মা আইপিএল-এর নতুন আবিষ্কার। মাত্র ১১ বলে টি-টোয়েন্টিতে অর্ধশতক করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর নামে। অনেকেই মনে করছেন, ভবিষ্যতে ভারতের জাতীয় দলের দরজায় তিনি কড়া নাড়তে পারেন।
এই গল্প শুধু একটা ক্রিকেট ম্যাচ জেতার গল্প নয়, বরং লড়াই করে নিজেকে প্রমাণ করার গল্প। যেখানে প্রতিভার সঙ্গে ছিল পরিশ্রম, সুযোগের সঙ্গে ছিল আত্মবিশ্বাস। আশুতোষ শর্মা হয়তো এখনও বড় তারকা নন, কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন—স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার সাহস থাকলে, কোনো বাধাই মানুষকে থামিয়ে রাখতে পারে না!