জলপাইগুড়ি : প্রতিভা কখনও সীমাবদ্ধ থাকে না, কিন্তু কখনও কখনও সে স্বীকৃতির আলো থেকে বঞ্চিত থাকে। এমনই এক প্রতিভাবান শিল্পী মোকোন রায়। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের খট্টিমারি এলাকার বাসিন্দা মোকোন বাবু পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি হলেও তার হাতে গড়া কাঠের শিল্পকর্ম অনেকেরই বিস্ময় জাগায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নিখুঁত মূর্তি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবু আজও সরকারি স্বীকৃতি বা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে তার প্রতিভা প্রচারের আলোয় আসতে পারেনি।

দিনভর অন্যের বাড়িতে পরিশ্রম করে রাতের অল্প সময়ে নিজের শিল্প সৃষ্টিতে মগ্ন হন মোকোন রায়। বাড়িতে থাকা কাঠের ছোট টুকরো দিয়েই তিনি একের পর এক অসাধারণ শিল্পকর্ম তৈরি করেন। তার কাজের নিখুঁততা দেখে বোঝা যায়, এটি শুধুমাত্র একজন সাধারণ কাঠমিস্ত্রির হাতের কাজ নয়, বরং এক প্রকৃত শিল্পীর সৃষ্টি।

মোকোন বাবুর অভিযোগ, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করলেও তার যোগ্য সম্মান তিনি পাননি। ২০১৮ সালে কালিরহাট দেওয়ানচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একটি মেলায় বিশেষ সম্মান প্রদান করা হয়েছিল তাকে। সেটিই তার জীবনের একমাত্র পুরস্কার। অথচ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেলায় অনেক শিল্পীর আমন্ত্রণ থাকলেও তার ডাক পড়ে না।

তার পরিবার মনে করে, সরকারি সহযোগিতা পেলে তার এই প্রতিভাকে আরও বেশি করে সবার সামনে তুলে ধরা সম্ভব। সরকারি স্বীকৃতি এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে মোকোন রায় আরও বড় মাপের শিল্পকর্ম গড়তে পারবেন এবং জলপাইগুড়ির এই লুকিয়ে থাকা প্রতিভা রাজ্য তথা দেশের গর্ব হয়ে উঠতে পারেন।
মোকোন রায়ের এই গল্প প্রমাণ করে যে প্রকৃত শিল্পী কখনও নির্দিষ্ট কোনো অবস্থানের মধ্যে আবদ্ধ থাকেন না। কিন্তু স্বীকৃতির অভাবে অনেক প্রতিভা হারিয়ে যায়। তার মতো শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের কাজকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসাই হবে সমাজের দায়িত্ব।