ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদে সরব জলপাইগুড়ির সুশীল সমাজ
নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ি পুর নির্বাচনে ব্যাপক ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, ইভিএম মেশিন ভাঙচুর, মুখ ঢাকা লাঠি বাহিনীর তান্ডবের প্রতিবাদে এবার পথে নামলো জলপাইগুড়ির নাগরিক সমাজ। সাহিত্য, সংস্কৃতির শহর জলপাইগুড়ি। ভোটকে কেন্দ্র করে আগে কোনদিন এরকম তান্ডব দেখে নি শহরবাসী।

চিরকাল রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় ছিল এই শহরে। কিন্তু বর্তমান রাজ্যের শাসক দলের মদদপুষ্ট দামাল ছেলেরা রবিবার ভোটের দিন শহরে যে ভাবে গনতন্ত্রের হত্যালীলায় মেতে উঠেছিল তারপর আর চুপ করে বসে থাকতে পারে নি জলপাইগুড়ির সুশীল সমাজ। সোমবার সন্ধ্যায় তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা মোড়ে সমবেত হয়ে এক পথসভা করে রবিবারের কলঙ্কজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সরব হন।

সেই সাথে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শহরের নাট্য, সংগীত, বাচিক শিল্পীদের সাথে অন্যান্যরাও। তারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে শপথ নেন।

কবি গৌতম গুহ রায় বলেন,গতকাল জলপাইগুড়ির ইতিহাসে এক কালো দিন ছিল। নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে গুন্ডারাজের হাতে। বুথ দখল জলপাইগুড়িতে ভাবা যায়নি, এই ঘটনায় জলপাইগুড়ির বিপন্ন মানুষেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কদমতলা মোড়ে একত্রিত হয়েছেন উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। জলপাইগুড়ির আহত ঐতিহ্য কে রক্ষার শপথ নিতে।

সমাজসেবী জ্যোতি প্রসাদ রায় জানান, পুর নির্বাচনে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটা প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তারই একটা মঞ্চ এখানে তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ি বাসীর তরফে। এখান থেকে জলপাইগুড়ি বাসী ছাপ্পা ভোটের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে একটি বার্তা দিতে চায়। আগামীতে তাদের দায়িত্ব পালনে তারা যেন গাফিলতি না দেখান। ভোট গণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার আশঙ্কা গণনাকেন্দ্রের ভেতরেও এমন তান্ডব হতে পারে। কারন যেখানে প্রশাসন শাসকদলের হয়ে কাজ করে সেখানে নিরপেক্ষতা চাওয়াটা অপরাধ।
ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই
“জেলার প্রশাসনিক কর্তারা এই শহরের ভূমিপুত্র নয়, কিন্তু তাদের প্রত্যক্ষ মদতে পুর ভোট নিয়ে কালিমালিপ্ত হল জলপাইগুড়ি।” তাই তাদের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার পথ অবরোধ করে ধিক্কার মিছিল জলপাইগুড়ি শহরে এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের।

রবিবার জলপাইগুড়ি পুরসভার নির্বাচনে নজিরবিহীন সন্ত্রাস, ভোট লুঠ এবং সোমবার এসডিও কার্যালয়ে বামফ্রন্টের স্বারকলিপি প্রদানে পুলিসের নির্বিচারে লাঠিচার্জ এই দুটি ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার রাতে শহরের বুকে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশ কর্তা এবং সদর মহকুমা শাসকের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করলো এসএফআই, ডিওয়াইএফআই।

উল্লেখ্য, রবিবার জলপাইগুড়ি পুর নির্বাচনে শহর জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস এবং প্রকাশ্যে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ছবি দেশ ব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সংবাদ মাধ্যম। এসএফ আইয়ের এক সদস্য বলেন, যাদের মদতে রবিবার শহর জুড়ে সন্ত্রাসের পাশাপাশি অবাধে ছাপ্পা ভোট চললো, সেই এসডিও, পুলিশ কর্তারা কেউই এই ঐতিহ্যবাহী শহরের স্থায়ী বাসিন্দা নন, চাকরি সূত্রে এই শহরে কিছু দিনের জন্য এসেছেন, কিন্তু ওনাদের প্রত্যক্ষ মদতে রবিবার জলপাইগুড়িতে পুর নির্বাচন নিয়ে যা যা ঘটলো তাতে এই শহর এবং শহরবাসী কালিমালিপ্ত হয়েছে। তাই ওনাদের পদত্যাগ দাবি করছি।
ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদে বিজেপির মৌন মিছিল

পুরভোটে গনতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, এর প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে জলপাইগুড়ি রাস্তায় নামলো বিজেপি। সোমবার সন্ধ্যায় শহরের ডিবিসি রোডে জেলা বিজেপি কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে বিজেপি। মৌন মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে ডিবিসিরোড়ে এসে শেষ হয়। বিজেপি জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামী বলেন, যেভাবে ছাপ্পা ভোট হল পুরভোটে শহরবাসীর লজ্জা। এই কারণে মুখে কালো কাপড় বেঁধে আন্দোলন। গণতন্ত্রের অধিকার হত্যা ও ধর্ষণ করা হল এই হল অবস্থা।”