Cricket : ফিনিক্সের মতো উত্থান- করুণ নায়ারের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

পিনাকী রঞ্জন পাল : ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক গল্প আছে, যেখানে খেলোয়াড়রা খারাপ সময়ে হারিয়ে গেছেন। কিন্তু করুণ নায়ারের গল্প একদম আলাদা। একসময় জাতীয় দলের হয়ে মাঠে ঝলসে উঠেছিলেন, তবু তাঁর পথ থেমে গিয়েছিল। এবার করুণ নায়ার যেন ক্রিকেটের ফিনিক্স পাখি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে করুণ একটি টুইট করেছিলেন: “প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা চান্স দাও!” ওই টুইটের পেছনে ছিল হতাশা। কর্নাটক রাজ্য দল তাঁকে বাদ দিয়েছিল, জাতীয় দল তো আগেই দূরে সরে গিয়েছিল। আইপিএলেও সুযোগ মিলছিল না। তখন মনে হয়েছিল, হয়তো করুণ নায়ারের অধ্যায় শেষ।

কিন্তু ক্রিকেট আবার তাঁকে ডেকেছে। আর এবার, করুণ সেই সুযোগটাকে দুহাত ভরে কাজে লাগিয়েছেন। ২০২৪/২৫ মরশুমের বিজয় হাজারে ট্রফিতে করুণ যা দেখালেন, তা যেন ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এক রূপকথা। সাতটি ইনিংসে করুণ নায়ারের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৫২ রান, যার মধ্যে পাঁচটি সেঞ্চুরি। তাঁর গড়? অকল্পনীয়—৭৫২.০০!

এই টুর্নামেন্টে করুণ নায়ারের ইনিংসগুলো যেন ক্রিকেটের মহাকাব্য : ১১২, ৪৪, ১৬৩, ১১১, ১১২, ১২২, এবং ফাইনালে পৌঁছনোর ম্যাচে ৪৪ বলে ৮৮*। বিশেষ করে শেষ ওভারে ২৪ রান তুলে দলকে জয় এনে দেওয়ার মুহূর্তটি ছিল নজিরবিহীন। বিদর্ভের হয়ে খেলে করুণ দেখালেন যে হারানো তারকারা ফিরে আসতে পারে, যদি ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকে।

করুণের রাজ্য কর্নাটক তাঁকে আরেকটা সুযোগ দিতে চায়নি। তাঁরা ভেবেছিল, করুণ হয়তো শেষ হয়ে গেছেন। কিন্তু অবেয় কুরুভিল্লার উদ্যোগে বিদর্ভ দলে জায়গা পেয়ে গেলেন তিনি। তারপর যা ঘটল, তা যেন কল্পনার অতীত। করুণ নিজেকে পুনর্নির্মাণ করেছেন। শুধু নিজের ব্যাটিংই নয়, তাঁর মানসিক দৃঢ়তাও আজ নজির গড়েছে।

ভারতের হয়ে ২০১৬ সালে অভিষেক সিরিজে করুণ নায়ার করেছিলেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। কিন্তু ফর্ম হারিয়ে এক বছরের মধ্যেই জাতীয় দল থেকে ছিটকে যান। এখন, ভারতীয় টেস্ট দলের ব্যাটিং সংকটে করুণের নাম আবার উঠে এসেছে। ক্রিকেট বোর্ডের আলোচনায় তাঁর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এমন ব্যাটিং ফর্মে থাকা একজন খেলোয়াড়কে কি উপেক্ষা করা সম্ভব?

ক্রিকেটপন্ডিতরা করুণের এই প্রত্যাবর্তনকে বলছেন, “ফিনিক্স পাখির গল্প বাস্তবের মাটিতে দেখা।” তিনি প্রমাণ করেছেন যে প্রতিভা কখনো মরে না। প্রতিকূল সময় এলেও লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।

করুণ নায়ার শুধু ক্রিকেটে ফিরলেন না, তিনি আমাদের দেখালেন, জীবনের যেকোনো লড়াইয়ে ফিরতে সাহস লাগে, বিশ্বাস লাগে, আর কঠোর পরিশ্রম লাগে। কখনো না কখনো, জীবনের সেই সুযোগ আবার আসবেই। মাঠে তাঁর ব্যাট যেন বলে উঠেছে, “আমার জায়গা আমি নিজেই ফিরে পাব।” জাতীয় দলের দরজায় আরেকবার কড়া নাড়ছেন তিনি। তাঁর এই উত্থানই প্রমাণ করে দেয়, ক্রিকেট সত্যিই একটি সুন্দর খেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *