অকাল দীপাবলি গারখুটা গ্রামে: হাতির ভয়ে অভিনব আলোর কৌশলে বাঁচার চেষ্টা

ধুপগুড়ি, জলপাইগুড়ি: রাত নামলেই আতঙ্ক ছড়ায় গারখুটা গ্রামে—এই বুঝি হাতির পাল চলে এল। জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি ব্লকের ঝাড় আলতা ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী এই গ্রামটি মোরাঘাট রেঞ্জের জঙ্গলের একেবারে কোল ঘেঁষে। সোনাখুলি ও খট্টিমারি জঙ্গল দুই দিক থেকে ঘিরে রেখেছে জনবসতিকে। জীবিকার উৎস জঙ্গল ও কৃষি হলেও, এখানকার মানুষের রাত কাটে নির্ঘুম ভয়ে।

বাইসন বা চিতাবাঘের দেখা না মিললেও, হাতি যেন রীতিমতো ‘অতিথি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্রামে। সন্ধ্যা নামতেই কান পাতলেই শোনা যায় গজদন্ত ধ্বনি, ভাঙচুরের শব্দ। ফসল চাষ কিংবা বসতবাড়ির উপর দানবীয় হামলা—এই ভয় যেন নিত্যসঙ্গী।

তবে এবার গ্রামবাসীরা নিয়েছেন এক অভিনব উদ্যোগ। গত বছর দীপাবলিতে যেসব বাড়িতে টুনি বাল্ব জ্বলছিল, দেখা গিয়েছিল সে এলাকায় হাতি ঢোকেনি। সেই অভিজ্ঞতাকে এবার রূপ দেওয়া হয়েছে কৌশলে।

এই বছর দীপাবলি এখনও বহু দূরে, কিন্তু গারখুটা গ্রামে এখনই আলোয় আলো দীপাবলি। কৃষিজমি ঘিরে, বাড়ির চারপাশে, এমনকি ক্ষেতের মাঝে টাঙানো হয়েছে এলইডি টুনি বাল্ব। সূর্য ডুবার আগেই জ্বলে উঠছে আলোর সারি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গোটা গ্রাম যেন উৎসবের সাজে সেজেছে।

“গত বছর দীপাবলিতে যেসব এলাকায় আলো জ্বলছিল, সেখানে হাতি ঢোকেনি। সেই অভিজ্ঞতাই এবার কাজে লাগানো হচ্ছে,” জানালেন গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা।

এই পদ্ধতি প্রযুক্তিগত দিক থেকে সরল হলেও কার্যকর—হাতিরা সাধারণত উজ্জ্বল আলো বা অচেনা উজ্জ্বল পরিবেশ এড়িয়ে চলে। আলোকে কাজে লাগিয়েই গারখুটা গ্রামের মানুষ রচনা করেছেন এক আলোকিত প্রতিরোধ কৌশল।

বনদপ্তরের তরফ থেকেও এই উদ্যোগকে প্রশংসা করা হয়েছে। গারখুটা এখন শুধুই একটা গ্রাম নয়, হয়ে উঠেছে গ্রামীণ বুদ্ধিমত্তা ও সংকল্পের প্রতীক। যখন দমন নয়, আলো দিয়ে প্রতিহত করা যায় বন্য প্রাণীর আক্রমণ—তখনই মানবিকতার নতুন পথ তৈরি হয়।

স্থানীয় কৃষক, “হাতি ঢুকলে রাতের ঘুম উড়ে যায়। এখন আলোয় আলোয় চারদিক থাকায় আমরাও কিছুটা নিশ্চিন্ত। টুনির আলো শুধু জমি নয়, আমাদের মনেও আলো ফেলেছে।”

জলপাইগুড়ির গারখুটা যেন অকাল দীপাবলির রোশনাইয়ে তৈরি করেছে এক অভিনব পথ। বনজ প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানে আলোই হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার—এই বার্তাই ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামবাসীদের সংগ্রামী আলোর রেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *