পিনাকী রঞ্জন পাল : ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে বীরেন্দ্র শেহবাগ এমন এক নাম, যিনি তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং নির্ভীক মানসিকতার জন্য সর্বদা স্মরণীয়। তাঁর ৩১৯ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস আজও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে অমলিন। শেহবাগ শুধুই একজন ব্যাটসম্যান নন, বরং তিনি একটি মানসিকতা, যেটি শিখিয়েছে ক্রিকেটে কিভাবে ভয়ের ঊর্ধ্বে উঠে খেলতে হয়। আজ তাঁরই পুত্র, আর্যবীর শেহবাগ, সেই পথেই হাঁটছে। ১৭ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ কোচবিহার ট্রফিতে মেঘালয়ের বিরুদ্ধে ২৯৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে আর্যবীর প্রমাণ করেছে যে, তার রক্তে বইছে শেহবাগীয় আগ্রাসন ও প্রতিভা।
শেহবাগের শিক্ষায় গড়া আর্যবীর
আর্যবীরের ব্যাটিংয়ে যে সাহস এবং আত্মবিশ্বাসের ছাপ দেখা যায়, তার পেছনে রয়েছে বাবার কঠোর শিক্ষা। শেহবাগ তাঁর সন্তানদের শুধু ভালো ব্যাটিং নয়, মাঠে ভয়ডরহীন খেলার মন্ত্র শিখিয়েছেন। এমনকি নিজের ৩১৯ রানের রেকর্ড ভাঙার চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন। স্কুল ক্রিকেট হোক বা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, শেহবাগ তার সন্তানদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, মাঠে রান করাই শেষ কথা।
আর্যবীর এই শিক্ষা ভালোভাবেই আত্মস্থ করেছে। তার ব্যাটিংয়ে দেখা যায় সেই নির্ভীক মানসিকতা। মেঘালয়ের বিরুদ্ধে ২৯৭ রানের ইনিংসে ৫১টি চার এবং ৩টি ছক্কা মেরেছে সে। ত্রিশতরানের সামনে দাঁড়িয়েও তার ব্যাটিংয়ের গতি থামেনি। বাবার দেওয়া ফেরারির প্রলোভন থাকলেও সে ব্যাট চালিয়ে গেছে তার নিজস্ব স্টাইলে। শেহবাগ যেমন শতরানের পরেও ঝুঁকি নিতে পিছপা হতেন না, আর্যবীরও সেই ধাঁচেই ব্যাট করে।
ফেরারির হাতছাড়া ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
বীরেন্দ্র শেহবাগ একবার বলেছিলেন, “যদি আমার কোনো সন্তান স্কুল ক্রিকেটেও আমার করা ৩১৯ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারে, তাহলে তাকে একটি ফেরারি উপহার দেব।” আর্যবীর ২৩ রানের জন্য সেই সুযোগ হাতছাড়া করলেও বাবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। শেহবাগ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “তুমি ভালো খেলেছ। ত্রিশতরানের লক্ষ্য ছুঁতে পারনি, কিন্তু নিজের ভেতরের আগুনটা ধরে রেখো। আরও অনেক বড় ইনিংস খেলতে হবে।”
এই উক্তি থেকে স্পষ্ট, বাবার চেয়েও বড় স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা আর্যবীরের আছে। কোচবিহার ট্রফিতে তার ২৯৭ রানের ইনিংস শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি এক প্রতিশ্রুতি—একদিন হয়তো এই তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠবে।
ভবিষ্যতের দিশা
আর্যবীরের এই সাফল্যকে কেবল একটি ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে নয়, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা উচিত। তার ইনিংস দেখিয়েছে যে, শেহবাগীয় আগ্রাসন এবং মানসিকতা এখনো হারিয়ে যায়নি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং কোচবিহার ট্রফিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে আর্যবীর ইতিমধ্যেই নির্বাচকদের নজরে এসেছে।
আর্যবীরের লক্ষ্য শুধু আইপিএল খেলা নয়, বরং একদিন জাতীয় দলের হয়ে সেই আগ্রাসী ক্রিকেট ফিরিয়ে আনা, যার জন্য বীরেন্দ্র শেহবাগ বিখ্যাত ছিলেন। তার ব্যাটিং স্কিল, সাহস এবং বাবার প্রেরণায় সে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দাপট দেখাবে বলে আশা করা যায়।
বীরেন্দ্র শেহবাগ ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যিনি নিজের বিধ্বংসী ব্যাটিং দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারতেন। আজ তাঁর পুত্র আর্যবীর সেই উত্তরাধিকারকে সগর্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২৯৭ রানের ইনিংস শুধু একটি শুরুর গল্প। সামনে আরও অনেক মাইলফলক অর্জন করবে এই তরুণ।
যেভাবে বাবার কাছে শেহবাগের ৩১৯ রান একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি আগামী দিনে আর্যবীরও হয়তো এমন উচ্চতায় পৌঁছাবে, যেখানে তার বাবার কথা নয়, বরং বিশ্ব ক্রিকেট তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। ভারতীয় ক্রিকেটের এক নতুন যুগের আগমনী বার্তা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আর্যবীরের এই অসাধারণ ইনিংসের মধ্যে দিয়ে।