Cricket : এক অদম্য কিশোরের স্বপ্নপূরণের গল্প : আয়ুষ শিন্ডে

ক্রিকেট—শুধু খেলা নয়, এটি ভারতের জন্য একটি আবেগ। এই মাঠেই তৈরি হয় অনেক তারকা, যাঁরা তাদের অসাধারণ প্রতিভা দিয়ে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। কিন্তু প্রতিটি তারকার সাফল্যের পেছনে থাকে অদম্য পরিশ্রম, নিষ্ঠা, আর স্বপ্নপূরণের জেদ। তেমনই একটি নাম আয়ুষ শিন্ডে, যিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিজের অসাধারণ প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের ক্রস ময়দানে আয়োজিত হ্যারিস শিল্ড টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং ঝড়ে ভেঙে গেল মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের পুরনো রেকর্ড।

অপরাজিত ৪১৯ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস

১৫ বছরের আয়ুষ শিন্ডে হ্যারিস শিল্ডের ইতিহাসে নিজের নাম সোনার অক্ষরে লিখিয়েছেন। জেনারেল এডুকেশন অ্যাকাডেমির হয়ে পার্লে তিলক বিদ্যামন্দিরের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫২ বলে অপরাজিত ৪১৯ রানের ইনিংস খেলে তিনি নজর কেড়েছেন। এই ইনিংসে ছিল ৪৩টি চার আর ২৪টি ছক্কা, যা আয়ুষের আক্রমণাত্মক এবং আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং স্টাইলের পরিচায়ক। তার দল ম্যাচে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে।

সচিন তেন্ডুলকরের আগের রেকর্ড ছিল ৩৪৬ রান। সেই রেকর্ড ভেঙে আয়ুষ এখন হ্যারিস শিল্ডে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। শীর্ষে রয়েছেন পৃথ্বী শ, যিনি ২০১৩ সালে ৫৪৬ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন আরমান জাফর (৪৯৮) এবং সরফরাজ খান (৪৩৯)।

প্রেরণার পেছনে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা

ইনিংস শেষে আয়ুষ জানিয়েছেন যে, তার প্রেরণা বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার মতো আন্তর্জাতিক তারকারা। আয়ুষ বলেন, “আমি ৫০০ রান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের দলের ওভার শেষ হয়ে গেছে। আমি খুশি, তবে আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমার প্রথম লক্ষ্য মুম্বাইয়ের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা পাওয়া। এরপর একদিন দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি।”

এই কথা থেকেই স্পষ্ট, আয়ুষ নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার এই জেদ এবং আত্মবিশ্বাসই তাকে ভবিষ্যতে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে।

বাবার অবদান: একটি স্বপ্নের ভিত্তি

একজন তারকার সাফল্যের পেছনে সবসময় থাকে পরিবারের নিঃস্বার্থ সমর্থন। আয়ুষের ক্ষেত্রে তার বাবা সুনীল শিন্ডে সেই ভূমিকা পালন করেছেন। সুনীল নিজে টেনিস বল ক্রিকেট খেলতেন, কিন্তু ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের জীবনধারা সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছেন। সাতারা থেকে মুম্বাইয়ে চলে এসে তিনি এখন নাভি মুম্বাইয়ের কামোতে সোনার গয়না মেরামতের একটি ছোট দোকান চালান।

সুনীল শিন্ডে বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আয়ুষের ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সাতারায় থাকলে এ ধরনের সুযোগ পেত না। মুম্বাইয়ে আসা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।” বাবার এই আত্মত্যাগই আয়ুষকে প্রতিদিন আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেয়।

সংগ্রাম থেকে সাফল্যের পথে

গত বছর মুম্বাইয়ের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পেলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি আয়ুষ। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, নিজের যোগ্যতা এমনভাবে প্রমাণ করবেন যাতে তাকে কেউ উপেক্ষা করতে না পারে। হ্যারিস শিল্ডে তার ৪১৯ রানের ইনিংস সেই প্রতিজ্ঞার বাস্তব প্রমাণ।

ভবিষ্যতের দিকে নজর

আয়ুষ শিন্ডের এই অসাধারণ ইনিংস কেবল একটি শুরু। তার নিষ্ঠা, পরিশ্রম, এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের পথেকি এগিয়ে নিয়ে যাবে। গোটা দেশ তার কাছ থেকে আরও বড় কিছু দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।

এই কিশোরের গল্প আমাদের শেখায় যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস, এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আয়ুষ শিন্ডে শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি প্রেরণা, যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ তরুণ ক্রিকেটারের জন্য একটি মাইলফলক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *