ছেলের চোখের সামনে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা; ফাঁসির সাজা স্বামীকে – জলপাইগুড়ি আদালতের রায়ে ন্যায়বিচারের আশ্বাস (ভিডিও সহ)

জলপাইগুড়ি, নিজস্ব সংবাদদাতা : একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন নারী— মিতালী দে ভৌমিক-এর জীবন থেমে গিয়েছিল এক নির্মম মুহূর্তে। ৮ বছরের ছেলের চোখের সামনে ঘটে গিয়েছিল সেই নৃশংসতা। অবশেষে দীর্ঘ এক বছরের লড়াইয়ের পর সোমবার জলপাইগুড়ি অ্যাডিশনাল থার্ড কোর্টের বিচারক সুজিত দে ভৌমিককে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে দিলেন।

এই রায়ের মাধ্যমে যেন কিছুটা হলেও শান্তি পেলেন মৃতার পরিবার। আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে মিতালীর মা কল্পনা সরকার চোখের জল সামলে বললেন, “আজ মনে হচ্ছে আমার মেয়ের আত্মা একটু হলেও শান্তি পেল। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা ফিরল।”

ঘটনাটি ২০২৩ সালের ২০ জুনের। ময়নাগুড়ির সরকার পাড়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছয়। পরকীয়ার অভিযোগ, পণের জন্য চাপ এবং দীর্ঘ দিনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের জেরে সেই দিন সুজিত কুড়ুল হাতে নিয়ে স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নৃশংসভাবে হত্যা করে নিজের ৮ বছরের ছেলের সামনেই।

Wife hacked to death in front of son; husband sentenced to death - Jalpaiguri court verdict

ঘটনার পর পুলিশ তদন্তে নেমে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বিশেষ সহকারী সরকারি আইনজীবী প্রসেনজিৎ কুমার দেব বলেন, “এই মামলা সমাজের কাছে একটা বার্তা। আমরা ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে মামলা সাজিয়েছিলাম। ন্যায়বিচার হয়েছে।”

বিচারক শুধু ৩০২ ধারায় ফাঁসির সাজা নয়, ৩০৭, ৩২৬ ও ৪৯৮ ধারাতেও অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়েছেন।

বিচারের রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিল অভিযুক্তও। রায় শোনার পর মাথা নিচু করে বসে পড়েন তিনি, মুখে একটাও কথা ছিল না।

আইনজীবীর বক্তব্য

একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বিচারপ্রক্রিয়া যে এখনও সমাজের বিশ্বাস ধরে রেখেছে — আজকের এই রায় তারই প্রমাণ। মিতালীর ছেলের জীবনে ফিরে আসবে না সেই শৈশব, কিন্তু হয়তো এই রায় তাকে একটা শক্ত ভিত দেবে— অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।

ন্যায়বিচারের আশায় নির্যাতিতদের জন্য এই রায় আজ এক নতুন বার্তা।

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *